অগ্রহায়ণের শেষ সময়ে এমন বৃষ্টি খুব কমই দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সারাদিন রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশের আকাশ ছাওয়া ছিল ধূসর মেঘে। সারাদিন ঝরেছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। যেন বর্ষাকাল। অসময়ের এ বৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। বিশেষ করে আলুচাষিদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে পাকা আমন ধান ও শীতকালীন সবজিরও। এর আগেও গত ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন চাষিরা। ফলে বারবার দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবেই গতকাল দিনভর বৃষ্টি ঝরেছে ঢাকায়। সকালে বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হয়েই বিপাকে পড়েন অফিসগামী এবং জরুরি কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। শুধু রাজধানী নয়, একই অবস্থার কথা জানা গেছে দেশের বেশির ভাগ এলাকায়। আবহাওয়া বিভাগের গত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ৯৬ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল উত্তরের শহর তেঁতুলিয়ায় ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ক্রমে ঘনীভূত হয়ে ২ ডিসেম্বর নিম্নচাপে এবং পরের দিন গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। যা এক সময় পরিণত হয় মিগজাউম নামের ঘূর্ণিঝড়ে। গত ৫ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানে। এখন ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, মিগজাউম এখন দুর্বল হয়ে ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে সরে গেছে। তবে তার প্রভাব যে একেবারে কাটেনি, এর প্রমাণ এই মেঘ-বৃষ্টি।
আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, এই বৃষ্টি আজ শুক্রবার তেমন থাকবে না। রোববার থেকে মেঘ কেটে মুখ দেখাবে সূর্য। ধরণি রোদের স্পর্শ পেলেও শুরু হবে শীতের প্রভাব। তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তারপর আপাতত নেই। তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে কমতে জেঁকে বসবে শীত। এবার শীত খানিকটা দেরিতেই আসছে। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবেই আবহাওয়ায় শীতের প্রভাব কম পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, আজ শুক্রবার বৃষ্টি অনেকটাই কমে যাবে। হয়তো দু-এক জায়গায় হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে অনেকের আলুর বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জের এক চাষি জানান, এক সপ্তাহ আগে আলুর বীজ রোপণ করেছিলেন তিনি। বৃষ্টির কারণে বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাঁর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারকান্দি এলাকার আমজাদ বেপারি জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি আলু চাষ করেন। মিধিলির জন্য সে সময় আলু চাষ করে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। পরে ধারদেনা করে আবার আলু লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আবার বৃষ্টিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁর।
উত্তরাঞ্চলের কৃষিভান্ডারখ্যাত গাইবান্ধায় এবারও বিস্তীর্ণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এখনও কোথাও কোথাও দুলছে সোনালি ধানের শীষ। আবার কেউ ধান কেটে ফেলে রেখেছেন জমিতে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। অগ্রহায়ণের এই অকাল বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতির আশঙ্কায় তাই দুশ্চিন্তায় কৃষক। তারা জানান, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে পরিপক্ব ধান গাছগুলো নুয়ে পড়েছে মাটিতে। আবার কেটে জমিতে ফেলে রাখা ধানের নিচে জমেছে পানি।