জীবনের ৭১ বছর পূর্ণ করা এই শিল্পীর শুধু চাওয়া, আরো কিছু ভালো গান যেন গেয়ে যেতে পারেন।
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারে ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান তিনি কণ্ঠে তুলেছেন, সুরের জাদুতে বশ করেছেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান। জীবনের ৭১ বছর পূর্ণ করা এই শিল্পীর শুধু চাওয়া, আরো কিছু ভালো গান যেন গেয়ে যেতে পারেন।
জন্মদিন নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানান রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “সারাজীবন এত মানুষের শ্রদ্ধা, আশীর্বাদ, দোয়া, ভালোবাসা পেয়েছি এবং এখনো পাচ্ছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।
“আর কিছু চাওয়ারও নেই। আলহামদুল্লিাহ, অনেক পেয়েছি। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখে, ভালো কিছু গান যেন গাইতে পারি।”
চার বছর বয়সে নাচ শিখতেন রুনা লায়লা। তখন বড় বোন দীনা লায়লাকে গান শেখাতে যে উস্তাদ আসতেন, খেলার ফাঁকে তার কাছেই একটু একটু গানের তালিম নেওয়া শুরু। সেই শিক্ষকই রুনাকে গান শেখানোর পরামর্শ দিলেন। এরপর শুরু হয় রুনা লায়লার জীবনের নতুন অধ্যায়।
অল্প বয়সেই সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন, একে একে প্রকাশ হতে থাকে গানের অ্যালবাম। রুনা লায়লা হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি শিল্পী, উপমহাদেশীয় সংগীত জগতের এক বিস্ময়কর নাম।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শুধু গান নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে রুনা লায়লার জন্ম। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীত শিল্পী। রুনা লায়লা তাদের দ্বিতীয় সন্তান। মামা সুবীর সেনও ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী।
বাবার বদলির চাকরির কারণে আড়াই বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজশাহী থেকে পাকিস্তানের মুলতানে চলে গিয়েছিলেন। শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। সেখানেই উচ্চাঙ্গ সংগীতে দীক্ষা নেন ওস্তাদ হাবিব উদ্দিন খান ও আবদুল কাদের পিয়ারাংয়ের কাছে। গজলে দীক্ষা পান পণ্ডিত গোলাম কাদিরের (মেহেদি হাসানের ভাই) কাছে।
রুনা সিনেমায় প্লেব্যাক শুরু করেন কিশোরী বয়স থেকেই । উর্দু গানের বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে গাইতেন। ‘জুগনু’ ছবি দিয়ে ১৯৬৫ সালে তার প্লেব্যাক ক্যারিয়ার শুরু হয়। আর বাংলা ছবিতে গান গাওয়া শুরু করেন সুবল দাসের সুরে ‘স্বরলিপি’ ছবিতে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় এক হাজার গান রেকর্ড হয়ে যায় তার।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে আসেন রুনা। সে সময় ভারতে বড় তিনটি কনসার্টে গান পরিবেশন করে সে দেশের দর্শকদের কাছেও সমাদৃত হন। বিশেষ করে ‘দমাদম মাস্ত কলন্দার’ গানটির জন্য ভারতে আলাদা পরিচিতি পান তিনি। ভারতের দুই কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের সঙ্গেও সখ্য হয়।
বাংলা-হিন্দি-উর্দু ছাড়াও গুজরাটি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু, বেলুচ, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা। ক্যারিয়ার জুড়ে পেয়েছেন নানা পুরস্কার।
বাংলাদেশ সরকার এই শিল্পীকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া ভারতে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে তার ঝুলিতে এসেছে নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কার।